Description
ম্যালেরিয়া পরীক্ষা: কেন, কখন, কিভাবে? Malaria Testing: Why, When, How?
ম্যালেরিয়া কি? What is Malaria?
ম্যালেরিয়া এক প্রকারের প্রোটোজোয়া ঘটিত রোগ, যা আমাদের যকৃতের কোষ কে প্রথম আক্রমণ করলেও লোহিত রক্ত কণিকাকে প্রধানত আক্রমণ করে ও ধ্বংস করে। ভারতীয় উপমহাদেশ, ম্যালেরিয়া প্রবণ অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। তাই, একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ম্যালেরিয়া রোগ সম্পর্কে এবং ম্যালেরিয়া পরীক্ষার রীতি ও নীতি নিয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ পরীক্ষা পদ্ধতির উপর রোগ নির্ণয় অনেকটা নির্ভর করে।
কখন ম্যালেরিয়া টেস্ট করা হয়? When to get tested Malaria?
ম্যালেরিয়া রোগের কোন লক্ষণ দেখা গেলে যেমন কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হওয়া, স্প্লিন বড় হয়ে যাওয়া, রক্তাল্পতা হওয়া অর্থাৎ অ্যানিমিয়া হওয়া, মাথা ব্যথা, বমি বমি ভাব, মাথা ঝিম ঝিম করা, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বৃদ্ধি পাওয়া, অল্প পরিমাণে জন্ডিস হওয়া, ইত্যাদি লক্ষণ দেখা গেলে ম্যালেরিয়া টেস্ট করার প্রয়োজন হয়। এছাড়া আপনার ডাক্তার যদি মনে করেন যে, আপনার ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা আছে বা হয়েছে, সে ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার ম্যালেরিয়া টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন। ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় বসবাস করলে বা ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকায় ভ্রমণ করার পর জ্বর হলে অবশ্যই ম্যালেরিয়া টেস্ট করতে হবে।
ম্যালেরিয়া পরীক্ষার প্রস্তুতি। Preparation before Malaria testing.
বিশেষ কোনও প্রস্তুতির প্রয়োজন হয় না। খালি পেটে বা ভর্তি পেটে ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট পরীক্ষা করার জন্য রক্তের নমুনা দেওয়া যায়।
ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করার জন্য রক্তে নমুনা সংগ্রহ। Collection of blood samples to test for malaria.
হাতের শিরা থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আঙ্গুলের সূচ বিদ্ধ করেও রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা যেতে পারে। আঙুলে সূচ বিদ্ধ করে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা সহজ, তাই এই পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করা হয়। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার সময় তেমন কোন বিপদের সম্ভাবনা নেই। সূচ বিদ্ধ করা স্থানে সামান্য ব্যথা হতে পারে। কোন কোন ব্যক্তির, রক্ত দেখে মাথা ঝিমঝিম করতে পারে বা মাথা ঘুরতে পারে। সাধারণত জ্বর থাকার সময় রক্ত পরীক্ষা করলে সহজে ম্যালেরিয়া ধরা পড়ে। কিন্তু সঠিক রীতি মেনে রক্ত পরীক্ষা করলে সকল সময়ই ম্যালেরিয়ার জীবাণু সনাক্ত করা সম্ভব।
রক্ত পরীক্ষা করার পদ্ধতিটি ম্যালেরিয়া টেস্টের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, ল্যাবরেটরিতে একটি কাঁচের স্লাইড এর মধ্যে পাতলা থিন স্মেয়ার এর সাহায্যে ম্যালেরিয়া রক্ত পরীক্ষা করা হয়। আর এই কারণে, ম্যালেরিয়া রোগ ধরা পড়ে না বা ফলস নেগেটিভ রিপোর্ট হয়। ম্যালেরিয়া পরীক্ষা করার জন্য দু ধরনের রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। থিন স্মেয়ার এবং থিক স্মেয়ার পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। এক্ষেত্রে, ম্যালেরিয়ার জীবাণু উপস্থিত থাকলে রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে অবশ্যই সেটা জানা যাবে।
থিন স্মেয়ার অপেক্ষা থিক স্মেয়ার পরীক্ষা অনেক অনেক ভালো। থিক স্মেয়ারে সহজেই ম্যালেরিয়ার জীবাণু দেখা যায়। তাই সাধারণ মানুষে হিসাবে আমাদের দেখতে হবে যে, ল্যাবরেটরিতে থিক এবং থিন এই দুই পদ্ধতি ব্যবহার করে পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা।
ম্যালেরিয়া পরীক্ষার সর্বাধুনিক পদ্ধতি। State-of-the-art malaria testing methods.
সর্বাধুনিক পদ্ধতি হল ম্যালেরিয়া অ্যাণ্টিজেন পরীক্ষা করা। এটি একটি রাপিড কিট টেস্ট। খুব কম সময়ের মধ্যেই এই টেস্টের ফলাফল জানা যায়। এই পরীক্ষা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য, খুব ভালো নিখুঁত ফলাফল জানা যায়। রাপিড ম্যালেরিয়া এন্টিজেন পরীক্ষা দু’রকমের হয়। এক ধরনের রাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট আছে যেটা প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স নামক জীবাণুকে সনাক্ত করতে পারে। আরেক ধরনের ম্যালেরিয়া আন্টিজেন টেস্ট আছে যে পরীক্ষার সাহায্যে চার ধরনের ম্যালেরিয়াকেই সনাক্ত করা সম্ভব হয়। আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স ছাড়াও আরও তিন ধরনের ম্যালেরিয়ার প্রজাতি আছে। মোট চার ধরনের ম্যালেরিয়ার জীবাণু সনাক্তকারী ডায়াগনস্টিক টেস্ট করা সব থেকে ভালো। এর ফলে যেকোনো ধরনের ম্যালেরিয়াকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে খরচ সামান্য বেশি হতে পারে।
পরীক্ষার ফলাফলের ব্যাখ্যা। Interpretation of Malaria test results.
ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট পরীক্ষার ফলাফল ফাউন্ড অর নট ফাউন্ড হিসাবে প্রকাশ করা হয়। ম্যালেরিয়ার জীবাণু উপস্থিত থাকলে সেটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়। কোন প্রজাতির ম্যালেরিয়ার জীবাণু রক্তে উপস্থিত আছে সেটাও উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ ম্যালেরিয়ার জীবাণু উপস্থিত রয়েছে মানে রোগীর দেহে ম্যালেরিয়া রোগ আক্রমণ করেছে।
রক্ত পরীক্ষায় ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু খুঁজে না পাওয়া গেলে রিপোর্টে রিপোর্টে নট ফাউন্ড উল্লেখ করা হয়। অর্থাৎ রক্তের মধ্যে ম্যালেরিয়ার পরজীবী পাওয়া যায়নি। এক্ষেত্রে বলা যায় যে রোগীর ম্যালেরিয়া নামক রোগ হয়নি। তবে এই তথ্য নিশ্চিত ভাবে জানার জন্য 12 থেকে 24 ঘণ্টা পর আবার ম্যালেরিয়া টেস্ট করা প্রয়োজন। রক্ত নেওয়ার সঠিক নিয়ম মেনে সঠিক সময় রক্ত নিলে বা সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে টেস্ট করলে, ম্যালেরিয়া রোগের আক্রান্ত রোগীর দেহে অবশ্যই ম্যালেরিয়া জীবাণু খুঁজে পাওয়া যায়।
ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসা। Treatment of Malaria
ম্যালেরিয়া রক্ত পরীক্ষায় ম্যালেরিয়া প্রোটোজোয়ার উপস্থিতি প্রমাণিত হলে বা ম্যালেরিয়া অ্যাণ্টিজেন পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হলে বুঝতে হবে যে, রোগীর দেহের ম্যালেরিয়া রোগ আক্রমণ করেছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ ম্যালেরিয়া রোগ নিজে নিজে সেরে যায় না। এর জন্য বিশেষ ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয়। যে সকল ওষুধ গুলি ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল; ক্লোরোকুইনিন, প্রাইমাকুইনিন, কুইনাইন ইত্যাদি। এছাড়া এর সাথে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হতে পারে।
Reviews
There are no reviews yet.